Suitable doses of homeopathic medicines - Dr. KM Alauddin

Latest

Monday, July 3, 2017

Suitable doses of homeopathic medicines

হোমিও ওষুধের উপযুক্ত মাত্রা
- ডাঃ কে এম আলাউদ্দিন

হানেমানের জন্ম ১৭৫৫ সালের ১০ই এপ্রিল। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮৪৩ সালের ২রা জুলাই। তার মেধাবী ছাত্র-জীবন অধ্যয়ন, গবেষণা ও ভাষা চর্চায় অতিবাহিত হয়। ১৭৭৯ সালের ১০ই আগষ্ট তিনি চিকিৎসা পেশায় উচ্চতর ডিগ্রীলাভ করেন এবং নিজেকে একজন সফল চিকিৎসক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। ১৭৯০ সালে তিনি হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার করে চিকিৎসা জগৎকে নতুন আলোর সন্ধান দিতে সক্ষম হন। নতুন চিকিৎসা জীবনের ৫৩ বৎসরই তিনি নতুন নতুন চিন্তা ও গবেষণায় নিমগ্ন ছিলেন। প্রথম থেকেই তিনি বিশ্বাস করতেন, রোগীকে বিশৃঙ্খল অবস্থার পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য উপযুক্ত ওষুধ উপযুক্ত মাত্রায় প্রয়োগ করা একজন চিকিৎসকের একান্ত কর্তব্য। “যোগ্যতম ওষুধের লক্ষণ তালিকা থেকে যে প্রতিচ্ছবি প্রস্তুত করা হয়, যদি তা যে রোগ আরোগ্য করতে হবে তার সাথে মিলে যায় তা হলে সে ওষুধই হবে এই রুগ্নাবস্থার সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আরোগ্যদায়ক হোমিও ওষুধ।” (অর্গানন প্যারা ১৫৪)। আর উপযুক্ত ওষুধের “মাত্রা যথোচিত ক্ষুদ্র না হলে” রোগের বৃদ্ধি দেখা দিবে (অর্গানন, অধ্যায় ১৫৭-১৬০)। যদি সুনির্বাচিত ওষুধ উপযুক্ত ক্ষুদ্র মাত্রায়, প্রত্যেক মাত্রাকে কিছু পরিমানে পরিবর্তিত করে (অর্গানন, অধ্যায় ২৪৭) ক্রমশঃ উচ্চতর শক্তিতে প্রয়োগ করা হয় তা হলে সে রূপ বৃদ্ধি ঘটে না” (অর্গানন, অধ্যায় ১৬১)।

হানেমান অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশের পুর্বেই “শক্তি” সমস্যার প্রায় সমাধান দিয়ে গিয়েছেন। শেষ সংস্করণে তিনি ওষুধের শক্তি সঞ্চার সম্পর্কে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত ধারণা পেশ করেছেন এবং ওষুধ তৈরীর বিধান ত্রুটিমুক্ত ভাবে রুগ্ন মানবজাতির কল্যাণে লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। (অর্গানন, অধ্যায় ২৭০-২৭১)। তবে মাত্রা প্রয়োগ বিষয়ে সুস্পস্ট ধারণা অর্জনের পূর্বে হানেমান যে ভাবে প্রথম থেকে তার শেষ জীবন পর্যন্ত মাত্রা প্রয়োগ করেছেন তা জানা আবশ্যক বলে মনে করি।
১। ১৭৯০ খৃঃ হানেমান চায়না পরীক্ষা করেণ। তখন থেকে তিনি অ্যালোপ্যাথি অপেক্ষা ক্ষুদ্র কিন্তু বৃহৎ মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতেন।
২। ১৮১০ খৃঃ অর্গাননের ১ম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সে সময় হতে ৫/১০ ফোঁটা মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করতেন।
৩। ১৮২৮ খৃঃ হ্যানিম্যান এক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগের উপর খুব জোর দেন। এক মাত্রার ক্রিয়া শেষ হলেই কেবল ২য় মাত্রা ব্যবহার করার কথা বলেছেন। কিন্তু মাত্রা যে কত ক্ষুদ্র হবে তা তিনি বলেননি।
৪। ১৮৩৩ খৃঃ অর্গাননের ৫ম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। তখন পোস্তদানার মত একটি ক্ষুদ্র অনুবটিকাকে এক মাত্রা বলে অভিহিত করেছেন।
৫। শেষ জীবনের ১০ বৎসর কাল অর্থাৎ ১৮৩৩ খৃঃ থেকে ১৮৪৩ খৃঃ এর মধ্যভাগ পর্যন্ত তিনি ওষুধের মাত্রাকে আরো ক্ষুদ্র করার জন্যে গবেষণা শুরু করেন এবং ১৮৩৭-৩৮ সালে তিনি এ বিষয়ে নতুন, পরিবর্তিত প্রায় পূর্ণাংগ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যা বর্তমানে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি নামে পরিচিত।
৬ষ্ঠ সংস্করণ অর্গাননই হ্যানিম্যানের জীবনের শেষ এবং সর্বশেষ্ঠ সংস্করণ। এর মধ্যে তিনি শক্তিকৃত ভেষজের মাত্রা, প্রস্তুত প্রণালী, ব্যবহার প্রণালী এবং তার ফলে চিকিৎসায় দ্রুত ফল প্রাপ্তি সম্পর্কে সহজবোধ্য ভাবে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার সার সংক্ষেপ বর্ণনা করেছেন। এ সর্বশেষ সংস্করণেই তিনি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি (Perfected method) বা নতুন শক্তিকরণ পদ্ধতি (New dynamization method) নামে অভিহিত করেছেন। এ প্রসংগে হানেমানের সর্বশেষ কথা (All these difficulties are wholly solved by my new altered but perfected method.) (Foot note No. 132) অর্থাৎ নতুন পরিবর্তিত ও পূর্ণাঙ্গ প্রথায় সর্ব প্রকার সমস্যার সামগ্রীক সমাধান হল। হানেমান হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর থেকে সবচেয়ে যে সমস্যা সমাধানের দিকে অগ্রসর হলেন তা হল শক্তি ও মাত্রা সমস্যা। ৬ষ্ঠ সংষ্করণ অর্গাননে তিনি সে সমস্যার অন্ধকার গহ্বর থেকে বেরিয়ে প্রায় সঠিক পথ নির্দেশনা দিতে পেরেছেন বলে তিনি নিজেই দাবী করেছেন।
এ ৬ষ্ঠ সংস্করণের আলোকে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি ওষুধের প্রয়োগ ও বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় না গিয়েও আমরা নিম্নের সিন্ধান্ত সমূহে পৌঁছতে পারি যে,
১। অর্গাননের ৬ষ্ঠ সংস্করণকে স্বীকার করলে পূর্ববর্তী সংস্করণ গুলোর যাবতীয় নীতিই পরিত্যাগ করতে হবে।
২। অতীব যত্নসহকারে নির্বাচিত ওষুধটি সর্বতোভাবে সদৃশ লক্ষণ সম্পন্ন হতে হবে। (অর্গানন, অধ্যায় -৪৬)।
৩। ওষুধটি উচ্চ শক্তিতে পরিণত করতে হবে (অর্গানন, অধ্যায় ২৭০ অনুযায়ী )।
৪। একমাত্র অনুগ্র অচির রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ-সিক্ত একটি অনুবটিকা শুষ্ক (অবশ্য অর্গানন, অধ্যায় ২৭০ অনুযায়ী তৈরীকৃত) অবস্থায় জিহ্বায় প্রয়োগ করা যায় উহাই এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম মাত্রা (অর্গানন, অধ্যায় ২৭২)
৫। উচ্চ শক্তির ওষুধ পানিতে গুলে দ্রবিভুত করে যথাযথ ক্ষুদ্র মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে (অর্গানন, অধ্যায় - ২৪৬)। অর্থাৎ সুনির্বাচিত ওষুধের একটি ১০ নং অনুবটিকা (কদাচিৎ একাধিক) পানিতে গুলে বা দ্রব করে ৭/৮/১২ দাগে বা মাত্রায় বিভক্ত করে রোগীদের সেবনার্থে দিতে হবে। (অর্গানন, অধ্যায় -২৪৮ ও তার পাদটিকা ১৩৪ অনুযায়ী)।

প্রসংগত এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন যে, দ্রবণটি ৪০, ৩০, ২০, ১৫ বা ১৮ টেবিল চামচ পানি দিয়ে ওষুধ তৈরী করতে হবে। তবে অধিক পানিতে মিশ্রিত করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ৭/৮ টেবিল চামচ প্রায় ৪ আঃ পানিতে মিশিয়ে ওষুধ তৈরী করা যাবে। (অর্গানন, অধ্যায় -২৪৮ এর পাদটিকা ১৩৪) এখানে অনির্দিষ্ট পরিমান পানিতে ওষুধ তৈরীর প্রবণতা যাতে সৃষ্টি না হয় সম্ভবত: সে কারণেই হানেমান সর্বোচ্চ ৪০ টেবিল চামচের সীমা নির্ধারণ করেছেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ২ আঃ থেকে ৪আঃ পরিমান কাঁচের গোল শিশিতে ওষুধ তৈরী করা যায়। উক্ত শিশির ৩/৪ অংশ বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পূর্ণ করে এর মধ্যে সুনির্ধাচিত ওষুধের নির্ধারিত ক্রমের শক্তির ১টি অনুবটিকা মিশিয়ে নিতে হবে। তা ৭/৮/১০/১২ দাগ করে ৮/১০/১২ বার ঝাঁকি দিতে হবে (অঃপঃ-২৪৮)। লক্ষনীয় যে ঝাঁকি দিতে গিয়ে যেন শিশির মিশ্রণকে ১০০ বারের বেশী- ঝাঁকি দেয়া না হয়। তা হলে পরবর্তী শক্তির ওষুধ প্রদানে কোন সমস্যা দেখা দিবে না। যথা ৭/৮ দাগ করা হলে ১০/১২ বার ঝাকি বা ১০/১২ দাগ হলে ৮ বার ঝাকি দিতে হবে। এভাবে সেবন যোগ্য ওষুধ তৈরীর পর ঐ বোতল থেকে ১ দাগ ওষুধ ৪ আঃ পরিমান পানিতে মিশিয়ে তা থেকে ১/২ চা-চামচ রোগীকে সেবন করতে দিতে হবে। এ সবের সাথে সাথে অবশ্যই চিকিৎসককে ঔষধের শিশিটিকে ঝাঁকি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে রোগীর জীবনী শক্তির প্রতি বিশেষ ভাবে ভেবে দেখতে হবে।

৬। ক্ষুদ্র অনুবটিকা যত বেশী পরিমান পানিতে মিশিয়ে বা অসংখ্য বার ধুঁয়েও ৮/১০/১২ বার ঝাঁকি দিয়ে প্রয়োগ করা হোক না কেন তা থেকে সরাসরি সেবন করতে দেয়া যাবে না। তা’তে (ঝাঁকির ফলে) ওষুধে আরো বেশী শক্তির সঞ্চার হবে বা ওষুধের সুপ্ত শক্তি বিকাশ লাভ করবে, যা রোগ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, এমন কি এর ফলে রোগীকে আরো জটিল করে তুলতে পারে। কিন্তু প্রতিক্রিয়ায় তা ক্ষুদ্রতম হবে যদি পূর্বোল্লোখিত নিয়মে সেবন করানো যায় অর্থাৎ ঝাঁকি দেয়ার পর ৪/৮ আঃ পানিতে মিশিয়ে তা থেকে ২/১ চা-চামচ পরিমান দেয়া হয় বা প্রয়োজন অনুযায়ী ২য়, ৩য় বা ৪র্থ গ্লাস থেকে দেয়া হয় (পাদটিকা ১৩৪ অঃ -২৪৮)। অর্থৎ নিয়ম মত ১ম গ্লাস তৈরীর পর তা থেকে ১ চা-চামচ মিশ্রণ অন্য আর একটি গ্লাসে নিয়ে নেড়ে সেখান থেকে সেবন করাকে ২য় গ্লাস বলে। এভাবে প্রয়োজনে যতবার খুশী গ্লাস পরিবর্তন করে সেবন করা যায়।
হানেমান তার শেষ সংস্করণটিকে প্রায় পূর্ণাঙ্গ বলেছেন কিন্তু পূর্ণাঙ্গ বলে আক্ষায়িত করেননি। কারণ বিজ্ঞান এক চলমান প্রক্রিয়া। নতুন নতুন চিন্তা ও গবেষণা কখনো থেমে থাকতে পারে না। তাই বলে গবেষণার নামে অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক বা অলৌকিক কিছু হোমিওপ্যাথির নামে চালাতে চাইলে হোমিওপ্যাথির গতিময় পথটিকেই শুধু রুদ্ধ করা হবে। তা ছাড়া পুরাতনকে আকড়ে ধরে বাতিলকৃত বিভিন্ন পন্থায় প্রস্তুত ওষুধের সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খেলেও হানেমানের হোমিওপ্যাথির আসল মর্মকথা কোন দিন উপব্ধি করা সম্ভব হবে না।
(হোমিও চেতনায় প্রকাশিত)

No comments:

Post a Comment