- Dr. KM Alauddin

Latest

Sunday, January 20, 2019


৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি
হানেমানের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কা-১
-ডা: কে এম আলাউদ্দীন

বর্তমান সময়ে হোমিওপ্যাথি ও ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতির মধ্যে আমি কোন পার্থক্য করতে চাই না। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়টি উপস্থাপন না করে আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে, আমার উপলদ্ধি দিয়ে চিকিৎসা জীবনের বাস্তবতার নিরিখে সহজ সরল ভাবে হোমিওপ্যাথিকে যে ভাবে বুঝেছি তাই শুধু উল্লেখ করতে চাই।

আমার আলোচনা হোমিওপ্যাথিতে আমার আন্তরিকতার আলোকে করতে চাই-অর্জিত জ্ঞান, বুদ্ধি বা বিজ্ঞতার আলোকে নয়। কারণ, বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞানী ও গুনি ।

হানেমান শুধু দার্শনিক বা জটিল ধরণের কোন তত্ব কথা দিয়ে হোমিওপ্যাথি আরোগ্য কলার বাগানকে সাজিয়ে রেখে যাননি। বরং মানুষের দুঃখ কষ্টকে আন্তরিকবতার সাথে উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করেছেন, তা নিরসনের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। বিজ্ঞানের জটিলতা সমূহ আত্মোপলদ্ধির মাধ্যমে খুব সহজ করে মানুষের কল্যাণ উপযোগী করার চেষ্টা করেছেন।

হানেমানের নিজের উপলদ্ধির বাস্তবতা তাকে, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হিসেবে সম্মান প্রদান করেছে। কাগুজে সদৃশ বিধানের অনেক কথা হানেমান-পূর্ব সময়েও প্রচলিত ছিল। তিনি শুধু, সে সব জ্ঞানগর্ভ দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক ভাষ্য সমূহ বিশ্লেষণ করেই হোমিওপ্যাথি আবিস্কার করেননি বা নতুন কিছু আবিস্কারের নেশায় হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আবিস্কার করেননি। হোমিওপ্যাথি আবিস্কারের পেছনে রয়েছে তার জীবন যন্ত্রনা, জীবনের উপলদ্ধি, সত্য পথে চলার তীব্র আকাংখা ও বিশ্বাস- তার সাথে নিজেকে, নিজের সমাজকে উপলদ্ধি করার আন্তরিকতাপূর্ণ মানবিক প্রস্তুতি।

তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, সত্য পথের তিনি একাই পথিক, সত্যের জন্য অবশ্যই তাকে অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হবে। মানব কল্যাণে উৎসর্গকৃত মহাপ্রাণ তার প্রথম প্রস্তুতির চিহ্ন হিসেবে, তিনি তার সখের ও কষ্টের অর্জিত {তৎকালীন (এলোপ্যাথিক) চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্ব্বোচ্চ এম ডি ডিগ্রী} চিকিৎসা জীবনই পরিত্যাগ করেছিলেন।

ভূমিকায় এ কথাগুলো উল্লেখ করে, স্বরণ রেখে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে আমার একটি ধারনার জন্ম হয়েছে যা আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই। তবে এর পূর্বে হানেমানের যন্ত্রনা কাতর কিছু উপলদ্ধির ছায়াচিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি---

১। কেন বিজ্ঞ জনেরা উপলদ্ধি করতে পারেন না, রোগের সৃষ্টি হয় কিভাবে এবং নিরাময়ের সঠিক উপায় কি? যার কারণ রোগ রয়েছে---
ক। জীবন প্রক্রিয়ার অভ্যন্তরিন প্রকৃতিতে এবং
খ। দেহের অদৃশ্য অভ্যন্তরে (অর্গানন, অধ্যায় ১; পদটিকা-১)
নিরাময় প্রসংগে বলা যায়---
ক। কল্পনা পূর্ণ এবং অনুমান ভিত্তিক কোন নিরাময় পদ্ধতিই রোগ নিরাময়
     করতে পারেনা।(ঐ)
খ। অবশ্যই রোগ নিরাময়ের ভিন্ন কোন পথ রয়েছে।

২। যখন পীড়িত মানব সাহায্যের আশায় অসহায় ভাবে ধুকতে থাকে তখন কেন অজ্ঞ লোকেরা দুর্বোধ্য ভাষায় রোগের অদ্ভুৎ ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে জীবন যন্ত্রনাকে আরো বিষময় করে তোলেন, হ্যানিম্যান উচ্চারণ করলেন -রুগ্ন মানুষগুলোকে গালগল্প দ্বারা আশার বানী না শুনিয়ে রোগ মুক্তির সত্যিকার উপায় খুজতে হবে। - এ হল হানেমানের যন্ত্রনা কাতর আত্মোলদ্ধির বাস্তব সম্মত প্রকাশ্য ভাষা যা রুগ্ন মানুষের রোগ যন্ত্রনা থেকে নিরাময়ের একমাত্র সোপান।

মহাত্মা হানেমান মানব জীবনে মহান আল্লাহর মহিমা প্রত্যক্ষ করে বুঝতে পারলেন, কোন আরোগ্য যোগ্য রোগ বা পীড়া জনিত পরিবর্তন শরীরের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকতে পারে না, বিজ্ঞ চিকিৎসকের নিকট অবশ্যই তা প্রকাশিত হয়ে থাকে ২ ভাবে; ক। ব্যক্তি কেন্দ্রীক লক্ষণ হিসেবে , খ। বস্তুকেন্দ্রীক লক্ষণ হিসেবে;
আরোগ্য পথে যা মহান আল্লাহর ইঙ্গিত (অর্গানন, অধ্যায়-১৪)।

ধ্যান মগ্ন হ্যানিম্যান শুনতে পেলেন, নৈঃশব্দের গর্ভীর গহ্বর থেকে কে যে উচ্চারণ করছে, “লক্ষণ সাদৃশ্য দ্বারা আরোগ্য সাধন কর” (অ,অধ্যায়-৫০)।
সম্মোহিত আত্মমগ্ন হ্যানিম্যান গভীর আত্ম বিশ্বাসের সাথে ঘোষনা করলেন, “হোমিওপ্যাথি পদ্ধতি রোগারোগ্য লাভের জন্য অবিতর্কিত ভাবে সঠিক পথ, যা আমার আগে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে কখনও ব্যবহার করেননি এটা প্রকৃতির শ্বাশ্বত এবং অব্যর্থ বিধির উপর প্রতিষ্ঠিত।” (অ,অ-৫২,৫৩)।

হানেমান এ পদ্ধতিতে রোগী আরোগ্যর জন্য একমাত্র অব্যর্থ পথ প্রদর্শক হিসেবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করলেনঃ-
১। রোগের সদৃশ ঔষধ নির্বাচন (অ-২৪)।
২। যা অবশ্যই সুপরীক্ষিত হতে হবে (অর্গা: পাদটিকা ১৫৬)
৩। যথপোযুক্ত ভাবে তা শক্তিকৃত হতে হবে। (অর্গা: অ- ২৪৬)
৪। অবশ্যই তা স্বল্প মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে (অ-২৭২)।
৫। এক বারে একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। (অর্গা:অ- ২৭)

স্বরণ রাখার জন্য এভাবে উল্লেখ করা যায়—
১। সদৃশ ২। পরীক্ষিত ৩। শক্তিকৃত ৪। ক্ষুদ্র ৫। একক

এখানেই হানেমান থেমে যাননি, মানবতার কল্যাণে নিমগ্ন হানেমান রুগ্ন মানুষকে আরো সহজে আরোগ্য প্রদানের জন্য নতুনভাবে পথ চলা ও গবেষণা শুরু করলেন। নতুন ভাবে শুনালেন প্রায় পুর্নাঙ্গ সফলতার বাণী, রেখে গেলেন চিকিৎসকবৃন্দের জন্য বন্ধন মুক্ত হয়ে, রোগী আরোগ্যের অমিয় ধারায় অবগাহনের অভিজ্ঞতার অলোয় সজ্জিত সুশৃঙ্খল সোপান।

জীবনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণে তাই তিনি হোমিওচিকিৎসা জগতে বিস্ফোরণ ঘটালেন। ঔষধ প্রয়োগ বিষয়ে পূর্বের অধিকাংশ ধারনা সমূহ পাল্টে দিলেন। অর্গানন ৫ম সংস্করণ পর্যন্ত প্রয়োগ পদ্ধতি সমূহ বাতিল বলে ঘোষনা করলেন। (অ- ২৪৬ পাদটিকা) বন্ধন মুক্ত হল হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞান---
১। দ্রুত বিনা কষ্টে ও স্থায়ী রোগী আরোগ্যের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
২। মুক্ত বিহঙ্গের মত খোলা আকাশে বিচরনের উপায় খুঁজে পেল চিকিৎসকবৃন্দ।

নতুন ভাবে সংযোজিত হল হোমিওপ্যাথির জয়গান---
১। জলে গুলে ঔষধ প্রদান (অ-২৪৬, ২৭২)
২। নির্দিষ্ট সময় অন্তর (প্রয়োজনে, ঐ পাদটিকা)
৩। শক্তি পরিবর্তন রীতিতে (অ-২৪৮)
৪। স্বল্প মাত্রায় (সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত,অ- ২৪৬)

       হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল জ্ঞানের উৎস অর্গানন। হানেমান তার জীবদ্বশায়ই এর ৫টি সংস্করণ দেখে গিয়েছিলেন। ৬ষ্ঠ সংস্করণ (১৮৪২, ২০ ফেব্রুয়ারী) প্রেসে দেয়ার পর তিনি ইহ ধাম ছেড়ে যান। প্রসঙ্গ ক্রমে এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সকল যুগেই সকল লেখকবৃন্দ তাদের সমৃদ্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সমূহ তার পরবর্তি সংস্করণে সংযোজন করে থাকেন তাই সর্বশেষ সংস্করণকেই সর্বাধিক মূল্যায়ন করা হয়। হ্যানিম্যানের অর্গাননের ক্ষেত্রেও এটাই স্বাভাবিক। অর্গাননের ৫টি সংস্করণ প্রকাশের সময়কাল ছিল ১৮১০-১৯-২৪-২৯-৩৩ এবং ৬ষ্ঠ সংস্করণ প্রেসে দেয়ার পর বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে ১৯২১ সনে জগৎবাসি তার প্রকাশ্য রূপ দেখতে পান। তাই জ্ঞানের দাবী হলো, সর্ব শেষ ৬ষ্ঠ সংস্করণকেই অর্গানন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সংস্করণই অর্গানন।

আমি মনে করি অর্গানন বল্লেই ৬ষ্ঠ সংস্করণকেই বোঝাবে। অন্যান্য সংস্করণের প্রয়োজন হোমিও চিকিৎসা-বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা উপলদ্ধির জন্য, চিকিৎসার জন্য নয়। অন্যান্য সংস্করণের ব্যবস্থপনা, হোমিও চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনায় টেনে আনাই এ চিকিৎসা জগতে বিভেদের মূল কারণ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় শেষ সংস্করণের অর্গাননকেই চিকিৎসার ভিত্তি রূপে আঁকড়ে ধরা।

হ্যানিম্যান এক জন, অর্গানন একটি, চিকিৎসা পদ্ধতিও একটি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি) অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি একক ।

বলা যায় হানেমান, অর্গানন, হোমিওপ্যাথি ও ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা একই কথা। এখানেই সকল মত ও পথ এক হয়ে গেছে। এখানে এই আরোগ্যের মহামিলন কেন্দ্রে হোমিওপ্যাথির সাথে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্তমানে বলা যায়, ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাই হোমিওপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি মানেই ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।

@@@@
ডা: কে এম আলাউদ্দীন
 কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ
শাকুর ম্যানশন, সদর রোড,বরিশাল।
০১৯১১ ৯২ ৯৪ ৫৭, ০১৭১১ ১০৮৩২৫





No comments:

Post a Comment