হোমিওপ্যাথি মানেই ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা
হ্যানিম্যান বুঝতে পেরেছিলেন,
- সত্য পথের তিনি একাই পথিক।
হ্যানিম্যানের যন্ত্রনা কাতর কিছু উপলদ্ধির ছায়াচিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি---------
জীবনের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ অর্গানন ৬ষ্ঠ সংস্করণে তাই তিনি হোমিওচিকিৎসা জগতে বিস্ফোরণ ঘটালেন।
১। দ্রুত বিনা কষ্টে ও স্থায়ী রোগী আরোগ্যের পথ উন্মুক্ত হয়ে গেল।
২। মুক্ত বিহঙ্গের মত খোলা আকাশে বিচরনের উপায় খুঁজে পেল চিকিৎসকবৃন্দ।
নতুন ভাবে সংযোজিত হল হোমিওপ্যাথির জয়গান---
১। জলে গুলে ঔষধ প্রদান (অ-২৪৬, ২৭২)
২। নির্দিষ্ট সময় অন্তর (প্রয়োজনে, ঐ পাদটিকা)
৩। শক্তি পরিবর্তন রীতিতে (অ-২৪৮)
৪। স্বল্প মাত্রায় (সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত,অ- ২৪৬)
হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল জ্ঞানের উৎস অর্গানন।
হ্যানিম্যান তার জীবদ্বশায়ই এর ৫টি সংস্করণ দেখে গিয়েছিলেন। ৬ষ্ঠ সংস্করণ (১৮৪২, ২০ ফেব্রুয়ারী) প্রেসে দেয়ার পর তিনি ইহ ধাম ছেড়ে যান।
অর্থাৎ ৬ষ্ঠ সংস্করণই অর্গানন।
আমি মনে করি অর্গানন বল্লেই ৬ষ্ঠ সংস্করণকেই বোঝাবে।
হ্যানিম্যান এক জন, অর্গানন একটি,
চিকিৎসা পদ্ধতিও একটি (৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি)
অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি একক ।
বলা যায় হ্যানিম্যান, অর্গানন, হোমিওপ্যাথি ও ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা একই কথা। এখানেই সকল মত পথ এক হয়ে গেছে। এখানে এই আরোগ্যের মহামিলন কেন্দ্রে হোমিওপ্যাথির সাথে ৫০
৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি আসলে কি?
ঔষধ প্রস্তুত সম্পর্কে রুগ্ন মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য তার চিন্তা ও গবেষণার ধারা ক্রমগতিতে এগিয়ে চল্লো।
হ্যানিম্যানের জীবিত অবস্থায়ই তিনি নতুন পদ্ধতির ঔষধ প্রস্তুত করেছিলেন। তার বাক্সেই পাওয়া গেল ৫০ সহসতমিক পদ্ধতির ঔষধের ১৭১৬ টি শিশি।
এ পদ্ধতিতে তার চিকিৎসিত রোগী বিবরণীও পাওয়া গেল। সকল বিষয়ই তিনি অর্গাননে বিশদ ভাবে উল্লেখ করেছেন।
বলা যায়, নতুন ভাবে প্রস্তুতকৃত ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতির উৎস অর্গানন এবং হোমিওপ্যাথি বিজ্ঞানের উৎসও অর্গানন।
এখানে শক্তির নাম করণ ও রূপ সম্পর্কে কিছু আলোকপাত করা যেতে পারেঃ
প্রতি ক্রমে ভেষজের বস্তুভাগ কমার ভিত্তিতে নাম করণ করা হয়।
সহস্রতমিক পদ্ধতির চিহ্ন সাধারণত ১/০, ২/০, ৩/০----;(হ্যানিম্যান যে ভাবে লিখতেন)
হ্যানিম্যান--১/০,২/০,৩/০----;
প্রতিক্রমে ৫০,০০০ ভাগ কমে (১৭০ ফু্টনোট) তাই নামকরণ হবে ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি,
রূপ হবে ১/০, হ্যানিম্যান যে ভাবে লিখেছেন; অন্য অর্থে তা অফুরন্ত (∞) শক্তি বোঝায়, এটাই জ্ঞানের দাবী। অবশ্য হানেমান, এ পদ্ধতির কোন নামকরন করেননি তিনি একে “নব বিধান” বলে উল্লেখ করেছেন।
৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি আবিস্কারের কারণঃ-
১। দ্রুত নিরুপদ্রোপে ও স্থায়ী আরোগ্যের মর্যাদা সঠিক ভাবে রক্ষা হচ্ছিল না।
২। অসম্পূর্ণতার উপলদ্ধি থেকে সম্পূর্ণতার দিকে অগ্রযাত্রার আত্ম প্রত্যয়।
৩। আরোগ্যের সময়কে সংক্ষিপ্ত করন।
ঔষধের প্রস্তুত প্রণালী সকল চিকিৎসকবৃন্দের জানা থাকা দরকার। যাতে একজন চিকিৎসক বুঝতে পারেন হোমিওপ্যাথিতে কোন স্থূল বস্তুর নাম ঔষধ নয়। ঔষধ প্রয়োগ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনার জন্য একান্ত ভাবে যা জানতে হবে -
পাত্রঃ ১। শিশি- কর্ক, ২। পানির বিশুদ্ধতা,পানির পরিমাণ।
মাত্রাঃ ১। ক্ষুদ্র মাত্রা ও বৃহৎ মাত্রা কি ও কেন (যা রোগী আরোগ্যে একান্ত প্রয়োজন)
২। ক্ষুদ্র করার নিরাময়। ইত্যাদি
অতঃপর যে কথা বলতেই চাই, ‘অর্গানন কোন প্রত্যাদেশ বাণী নয়, একটি সুপরীক্ষিত চিকিৎসা বিজ্ঞান’। বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই; তা’ বলে এ কথা বলাও সংগত হবে না যে প্রাকৃতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত সকল সত্যের ব্যাখ্যাই বিজ্ঞান দিতে সক্ষম। গবেষণার পথ রুদ্ধ নয়-এটা এক চলমান প্রক্রিয়া। বেঁচে থাকলে হ্যানিম্যান হয়তো আরো গবেষণা করতেন। এবং সে গবেষনার ধরণ হয়তো নিম্নরূপ হতে পারতো-
১। কি করে রোগী আরো দ্রুত আরোগ্য করা যায় তা ভাবতেন।
২। লক্ষণ সদৃশ ঔষধ নির্বাচনের আরো সহজ কোন উপায় খুঁজে বের করতেন।
৩। অবশ্যই আরো অনেক ঔষধ প্রুভিং করতেন ।
৪। ৫০ সহস্রতমিক ঔষধ দ্বারা প্রুভিং এর ব্যবস্থা করতেন।
৫। রোগ আরোগ্যের জন্য আরো কোন উচ্চ মানের চিন্তার ফসল আমাদের জন্য রেখে যেতেন।
সকল গবেষণাই পরিচালিত হয়, ভিত্তিভূমিকে স্বিকার করে, তাকে অস্বিকার করে নয়।হয়তো বর্তমানেও এমন কোন বিজ্ঞ পন্ডিত আছেন যারা অর্গানন ভিত্তিক চিন্তার প্রচার প্রসার ও গবেষণায় আত্মনিয়োগ করে মানব জাতির কল্যাণে নিরলস ভাবে গবেষণা করে যাচ্ছেন। আবার এমনও অনেক জ্ঞান-পাপী আছেন যারা গবেষনার নামে হ্যানিম্যান যে মত ও পথ পরিহার করে হোমিওপ্যাথির জন্ম দিয়েছেন তারা, সে পরিত্যক্ত মত ও পথের দিকেই আহবান করছেন; চিকিৎসা নয়, ‘মনগড়া আধুনিক-হোমিও গবেষণা’র আড়ালে যাদের অর্থ-আয়ের লোলুপতাই অধিক প্রস্ফুটিত।
নিশ্চয়ই তাদেরকে হোমিও গবেষক বা হোমিওপ্যাথ বলা যাবে না, যারা----
১। এক সাথে ৪/৫ প্রকার ঔষধ রোগীকে দিয়ে থাকেন।
২। স্থূল মাত্রা, মাদার টিংচার বা হোমিও-হারবাল নামের বিভিন্ন পেটেন্ট ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করেন।
৩। শক্তিকৃত একটি ঔষধের সাথে বায়োকেমী বা অন্য কোন ঔষধ একসাথে-একত্রে সেবন করতে দিয়ে চিকিৎসা করেন এবং যারা এলোপ্যাথি বা হোমিও ঔষধ একই সাথে প্রয়োগের ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
হ্যানিমেন স্পষ্ট ভাষায় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, “এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি এরা সরাসরি একে অন্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। যারা মনে করেন এ দু’টো পথ কখনো কাছাকাছি আনা যায় তারা নির্বোধ। পবিত্র হোমিওপ্যাথির প্রতি এটা হচ্ছে একটা অপরাধ যোগ্য বিশ্বাস ঘাতকতা ”(অর্গানন,অ-৫২)। একমাত্র নির্ভূল সাফল্য জনক আরোগ্যের দ্বারাই এ ধরনের লোকদেরকে শিক্ষা দিতে হবে। সর্বোপরি অবশ্যই বলা যায়, একমাত্র সদৃশ-বিধান মতে ঔষধ প্রয়োগ করলেই মানবজাতির সর্ব প্রকার রোগকে সুনিশ্চিতভাবে আরোগ্য সাধন করা সম্ভব। (অর্গানন, অধ্যায়-১০৯)
অবশেষে বলতে চাইঃ
১। হ্যানিম্যান অবিস্কৃত সত্যকে তার প্রদর্শিত পথ ধরেই গবেষনা করতে হবে, সকল গবেষনার ভিত্তি হবে অর্গানন।
২। অর্গানন মানেই ৬ষ্ঠ সংরক্ষণ, ৬ষ্ঠ সংরক্ষণ মানেই হোমিওপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি মানেই ৫০ সহস্রতামিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
No comments:
Post a Comment