চিকিৎসা বিজ্ঞানী হানেমান ও অর্গানন পরিচিতি,অর্গানন পর্ব-১
ডাঃ
কে এম আলাউদ্দীন
অবতারণিকা
আলোচ্য বিষয়ের শিরোনামে দুটি কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হানিমান সম্পর্কে আমরা সবাই জানি তিনি হোমিওপ্যাথির আবিষ্কর্তা এবং হোমিওপ্যাথির মৌলিক গ্রন্থ অর্গানন অফ মেডিসিন এর প্রণেতা। হানেমান শুধু একজন চিকিৎসক কিংবা শুধু একজন গ্রন্থ প্রণেতা এ কথা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি তার চিকিৎসা জীবনের আরম্ভ থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত প্রমাণ করে গিয়েছেন যে, তিনি একজন মানবতাবাদী দার্শনিক এবং একজন মানবদরদী চিকিৎসা বিজ্ঞানী। হানেমানের জন্মের পূর্বেও এমন বহু চিকিৎসক গত হয়েছেন যারা উচ্চ ডিগ্রিধারী ছিলেন। তার জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত বহু উচ্চতর ডিগ্রিধারী চিকিৎসক এ ধরাধাম ছেড়ে চলে গেছন। তারা সকলেই কি চিকিৎসা বিজ্ঞানী? প্রায় দুইশত পঞ্চাশ বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হানেমান অনন্য, অসাধারণ এবং একক। তার আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রচলিত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে সন্মূখের দিকে নিরবচ্ছিন্নভাবে, এগিয়ে চলছেতো চলছেই। আশা করি ভবিষ্যতেও এগিয়ে চলবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রসঙ্গত এখানে জেমস ক্রাউজ এর একটি উক্তি উল্লেখ করতে চাই,"হানে মান চিকিৎসাবিজ্ঞানের চারজন নবযুগ স্রষ্টাদের অন্যতমের আসনে সমাসীন। হিপোক্রেটিস (Hippocractes) ছিলেন একজন পর্যবেক্ষক। রোগ নির্ণয় করার জন্য রোগীদের শয্যাপাশে দাঁড়িয়ে ব্যবহারিক শিক্ষাসংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ (clinical observation) করার কলাকৌশল তিনি প্রবর্তন করেছিলেন। গ্যালেন (Galen) একজন প্রচারক ছিলেন। পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়েই তিনি হিপোক্রেটিসের শিক্ষাকে চিকিৎসা জগতে প্রচার করেছিলেন। প্যারাসেলসাস (Paracelsus) একজন সুযোগ্য কর্মী ছিলেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক বিশ্লেষণ তিনিই প্রবর্তন করেছিলেন। আর হানিমান (Hahnemann) ছিলেন একজন গবেষক। রোগ ও ঔষধের লাক্ষণিক উৎস আবিষ্কার করে তিনি চিকিৎসা পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর স্থাপন করেছিলেন।"
হোমিওপ্যাথিই সর্বশেষ চিকিৎসা বিজ্ঞান
হানিমান তার সময়ে প্রচলিত চিকিৎসা বিদ্যার গড্ডালিকা প্রবাহে গা-ভাসিয়ে দেননি। তৎকালীন সময়ে প্রচলিত চিকিৎসা বিদ্যার অবস্থাকে মেনে চাকচিক্যময় জীবনের আহবানে সাড়া দিয়ে সুখে জীবন যাপন করেননি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণার পথে তিনি নিজের জীবনকে সঁপে দিয়েছেন। চলার পথে তাকে সহ্য করতে হয়েছে নির্মম নিষ্পেষণ, জ-ল জুলুম, অত্যাচার সত্যের পথ কণ্টকাকীর্ণ হলেও তিনি থেমে যাননি; অনাহারে থেকেছেন, দেশ ত্যাগ করেছেন কিন্তু সত্যের সাথে আপোষ করেননি। তাই তিনি যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের বিনিময়ে আবিষ্কার করেছিলেন সদৃশ বিধান, যার নাম দিয়েছিলেন হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথি নাম তার পূর্ব সময়ে প্রচলিত থাকলেও তার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না, ছিলনা বিশেষ কোন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা একমাত্র হানেমান তার গভীর গবেষণার ফসল, অর্গানন অভ মেডিসিন এর মধ্যে বিশুদ্ধভাবে স্থাপন করেছেন, মানবতাবাদী দর্শনের মূল ভিত্তি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মৌলিক দিকনির্দেশনা বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুদৃঢ় পথ ও পথ চলার বিশুদ্ধ পদ্ধতি।
হানেমান যেহেতু তার আবিষ্কৃত চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি রেখেছেন, তাই তৎকালীন প্রচলিত চিকিৎসা বিদ্যাকে অর্থাৎ বিশ্বের সকল চিকিৎসা পদ্ধতিকে তিনি অ্যালোপ্যাথি নামে অবহিত করেছেন। বর্তমান সময়ের চিকিৎসা পদ্ধতি যাকে আমরা এলোপ্যাথি নামে জানি সে নাম হানেমানের দেওয়া। হানেমানের আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের পর, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন কোন ধারা আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যান্য পদ্ধতির যে চাকচিক্যময় আবিস্কার সমূহ বিশ্বময় ছড়িয়ে রয়েছে, তা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পূর্ববর্তী চিকিৎসা পদ্ধতিরই মার্জিত বা পরিমার্জিত বা বিকশিত রূপমাত্র, নতুন কোন আবিষ্কার নয়। তাই বলা যায় হোমিওপ্যাথিই সর্বশেষ চিকিৎসা বিজ্ঞান অর্থাৎ সর্বাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান। এখানে
চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিসেবে হানেমান-এর বিশেষ পাঁচটি অবদানের কথা উল্লেখ করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছি।
সদৃশ বিধান
হানেমানের পূর্বেও, সদৃশ বিধানে চিকিৎসা করা সম্ভব এমন কথা অনেক মনীষীই বলেছিলেন। কিন্তু তারা সদৃশ বিধান অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করেননি বা এ নিয়মে চিকিৎসার কোনো পথ প্রদর্শন করে যাননি। হানেমান চায়না সেবনের মাধ্যমে, নিজের অজান্তে অলৌকিক ভাবে এমন একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করলেন, যা থেকে হোমিওপ্যাথিক বিজ্ঞানের মূলসূত্র আবিষ্কৃত হয়ে গেল। তিনি এ বিধানের বাস্তবতা উপলব্ধি করলেন, কষ্টকর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ বিধানের বিভিন্ন দিক মানব জাতির সেবায় তুলে ধরলেন। অর্গানন অফ মেডিসিন গ্রন্থের ২৪ থেকে ৭০ অধ্যায়ে তা বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তার ভাষায়ই তার মূল বক্তব্য এখানে উল্লেখ করা হলো,"কোন একটি রোগীর দৃশ্যমান লক্ষণাবলী যদি ওই ঔষধ সৃষ্ট লক্ষণসমূহের সদৃশ হয়, তা' হলে সেই ঔষধটিই উপযুক্ত শক্তি ও মাত্রায় প্রয়োগ করা হলে শীঘ্র, সর্বতোভাবে ও স্থায়ীরূপে রোগের লক্ষণসমষ্টি অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে রোগকে আরোগ্য করে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠা করে।" (অর্গানন, অধ্যায় ২৫)
তাই হানিমান ঘোষণা করলেন," জীবন্ত দেহযন্ত্রে একটি দুর্বলতর গতিশীল ব্যাধি অভিব্যক্তির দিক হতে অত্যন্ত সদৃশ ধর্মী হলে (বস্তুগত ভাবে বিভিন্ন হলেও) অন্য একটি বলবত্তর ব্যাধি কর্তৃক স্থায়ীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। (অর্গানন অধ্যায় ২৬)
হ্যানিম্যান সদৃশ বিধান আবিষ্কার করলেন এবং সদৃশ বিধানে, তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে চিকিৎসা করে গিয়েছেন। তার তিরোধানের প্রায় দুইশত বছর পর আজও এ বিধানের চিকিৎসা পদ্ধতি বিশুদ্ধভাবে প্রচলিত রয়েছে। আজ পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোন মনীষী এ বিধানের বিরোধিতা করে কোন বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণা প্রকাশ করতে পারেননি। এ এক প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, যতই দিন যাচ্ছে এ বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সম্মুখের দিকে এগিয়েই চলছে। সদৃশবিধান এমন এক যুক্তিনির্ভর বিজ্ঞান যা ইচ্ছে হলেই কেউ অস্বীকার করতে
পারেনা। হানেমান নিজেই বলেন,” আমার পূর্বে প্রকৃত আরোগ্যকলা আবিষ্কৃত হয় নাই—এ
সত্য স্বীকার করতে হবে। যুগযুগান্তরব্যাপী বৃথাই এর অনুসন্ধান করা হলেও
হোমিওপ্যাথিই (বা সদৃশবিধান- অনুঃ) হলো এ আরোগ্যকলা। এর মূলনীতিসমূহ শিক্ষাপ্রদ
এবং প্রয়োগেই তার প্রমাণ।“ (অর্গানন, ভূমিকা ৪র্থ সংষ্করণ)
ঔষধের শক্তি
হ্যানিম্যানের গবেষণাধর্মী জ্ঞান ও রুগ্ন মানুষের অবস্থা অনুধাবন করে তৎকালীন প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার অসারতা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিল। তৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগ আরোগ্য যেন রোগীর কাছে সোনার পাথর বাটি, চিকিৎসাব্যবস্থা ছেড়ে দিয়ে মনোনিবেশ করলেন গভীর গবেষণায়। তিনি খুঁজে পেলেন রোগীকে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেয়ার
মূলমন্ত্র। ভেষজের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতার মধ্যে তার আরোগ্যকারী ক্ষমতা নিহিত একথা হ্যানিম্যানের পূর্বে কেউ অনুধাবন করতে পারেননি। এ এক মহা আবিষ্কার, চিকিৎসা জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী, আরোগ্যের মহা দর্শন। তিনি আবিষ্কার করলেন ভেষজ আরোগ্যকর শক্তি নয় ওগুলোর মধ্যে নিহিত অন্তর্নিহিত শক্তিই আরোগ্যকর, তাও তা' জীবন্ত মানুষের উপরে প্রয়োগ করা হলে। এ অন্তর্নিহিত শক্তি কোন জড় বস্তুর উপরে প্রয়োগ করা হলে তা কখনোই কার্যকর নয়।
এ আরোগ্যকর শক্তির চিত্র আমরা খুঁজে পাই, আমাদের প্রভিংকৃত ঔষধ সমূহের প্রাপ্ত চিত্রের মাধ্যমে। ঔষধের প্রাপ্ত লক্ষণ সমষ্টিই রোগী আরোগ্যের প্রধান অবলম্বন। তাই প্রত্যেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বৃন্দের ঘরে ঘরে সঞ্চিত রয়েছে ঔষধ শক্তির মহা সংগ্রহশালা যার নাম মেটেরিয়া মেডিকা। অন্য প্যাথির মেটেরিয়া মেডিকা জড় বস্তুর রাসায়নিক শক্তির বর্ণনামূলক ইতিহাস আর হোমিওপ্যাথি ঔষধ চিত্রের মধ্যে রয়েছে ঔষধের অন্তর্নিহিত শক্তির বাস্তবধর্মী পরীক্ষা-নিরীক্ষা লব্ধ লক্ষণ সমষ্টির ইতিহাস অর্থাৎ ঔষধের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের বাস্তব বর্ণনা।
জীবনীশক্তি
যেকোনো চিকিৎসা বিজ্ঞানীর কাছে জীবন এক মহাবিস্ময়। পূর্ববর্তী সকল চিকিৎসা পদ্ধতিই, জীবনকে জর বস্তুর কারাগারে বন্দি করে, আপন ইচ্ছার খেলা ঘর বানিয়ে নিয়েছে। হ্যানিম্যান এ অবস্থা থেকে রুগ্ন মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। জীবন্ত মানুষের রোগমুক্তির জন্য মানুষের দেহ ও মনই একমাত্র উপাদান নয়, এখানে জীবনীশক্তির ভূমিকা রয়েছে। জীবনীশক্তি হানিমান-এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের আরেক মৌলিক আবিষ্কার। হানেমান-এর পূর্বে, জীবনের সাথে জীবনীশক্তির ভিন্ন অস্তিত্বের কথা কেউ স্বীকার করেননি। এ আবিষ্কার পূর্ববর্তী সকল দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের চিন্তা ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। হানেমান তার জীবনীশক্তির আলোচনায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছেন। তার উল্লেখিত বিষয়গুলোর গভীরে আমরা পৌঁছতে পেরেছি কিনা বা অনুধাবন করেছি কিনা তা আজও আমাদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হয়। ভেষজহীন ভেষজশক্তি, ঔষধের বস্তু-কণা ছাড়া শুধু ঔষধের
অদৃশ্যশক্তি জীবন্ত মানুষের জীবনীশক্তিকে নাড়িয়ে দিলো, জীবন্ত মানুষ এখন পর্যন্ত জানেই না, তা কিভাবে ঘটছে। বর্তমান বিজ্ঞান বিভিন্ন নামে বিভিন্ন ভাবে এ জীবনীশক্তি ব্যাখ্যা করেই চলেছেন হয়তো সঠিক জ্ঞান এখনো পর্দার আড়ালেই। সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য হয়তো এ আধুনিক বিজ্ঞানকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এখানে বলা যায় হানেমানের জ্ঞান ভবিষ্যৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদেরকেও স্পর্শ করতে পারবে। হানেমানের এ দর্শন জ্ঞানকে ডাক্তার টেস্টি'র ভাষায় যা তিনি তার মেটেরিয়া মেডিকায় উল্লেখ করেছেন তা' এখানে উল্লেখযোগ্য বলে মনে করি। তিনি বলেছেন,"হানেমান, যিনি চিন্তায় ছিলেন অদৃশ্যবাদী, ফিজিওলজিতে জীবনীশক্তিবাদী এবং সে কারণে চিকিৎসাবিজ্ঞানেও। অর্থাৎ ডেস়্কর্টিস্ এবং স্টল, দার্শনিকদ্বয়ের মানবীয় দ্বৈতবাদের (দেহ এবং আত্মা) পরিবর্তে তিনি মানুষের মধ্যে তিনটি সুদৃঢ় মূলতত্ত্ব আলাদা করেছেন। যথা: বস্তু, আত্মা, এবং অপর সূক্ষ্ম বস্তু, আত্মার মতো অদৃশ্য, আত্মা এবং দেহের মাঝখানে এক ধরনের মধ্যবর্তী জীবনীশক্তি, যার প্রতি তিনি সকল ব্যাধি, এবং আমাদের সকল জৈবকার্যকলাপকে আরোপ করেছেন।" ("Hahnemann
who was a declared spiritualist in philosophy, was a vitalist in physiology,
and hence in medicine. That is to say, instead of holding with Descartes
and stahl to the doctrine of a human dualism, he distinguishes in man, three
substantial principles, namely: matter, the soul proper and another
substance, immaterial like the soul, a short of intermediate principle
between the soul and body, to which he refers all diseases, and all our vital
functions.")
মায়াজম
মানুষের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই রোগ-শোক দুঃখ কষ্ট, এগুলো নিয়েই তাদের পথ চলা। আর তখন থেকেই চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সে যুগের বিজ্ঞ চিকিৎসকগণ তৎকালীন অবস্থা বিবেচনা করে তাদের মতই চিকিতসা করেছেন। হানেমান পূর্ব সময়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই দেহের প্রকাশ্য জটিলতা ও মনর বাহ্যিকতাকে কেন্দ্র করে, পর্যালোচনা করে, জর বস্তুর মাধ্যমে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছে। আল্লাহর দেয়া নেয়ামত বস্তুর মধ্যে অন্তর্নিহিত ক্ষমতা রয়েছে। যেভাবেই প্রয়োগ করা হোক না কেন তার কিছুটা কল্যাণকর দিক অবশ্যই প্রকাশ পেতে পাবে এবং তা অবস্থাভেদে অবশ্যই কার্যকর।
মানুষের আভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে, বাহ্যিক বা প্রাকৃতিক বিভিন্ন কারণে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থার যে সব বিপর্যয় দেখা যায়, তাই তাদের বিবেচনায়্ রুগ্নতা। যুগের পর যুগ এভাবেই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে চিকিৎসকগণ মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হানেমান সে পথেরই একজন পথিক।
হানেমান তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জীবনেও দেখতে পেলেন মানুষ রুগ্ন হচ্ছে, ঔষধ প্রয়োগের পর অনেকটাই সুস্থ হচ্ছেন। কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার কোন এক সময়, একই অবস্থা নিয়ে তার কাছে ফিরে আসছেন। রোগ সম্পূর্ণ আরোগ্য হচ্ছেনা, হানেমান চিন্তাগ্রস্থ হয়ে উঠলেন, ভাবলেন, গবেষণায় নিজেকে নিমর্জিত করলেন। মানুষের রুগ্নতা বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে দীর্ঘ ১২ বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। তিনি খুঁজে পেলেন পথের দিশা, আবিষ্কার হল মায়াজম তথ্য। তিনি বুঝতে পারলেন মানব জীবনের আভ্যন্তরীণ গভীরে এক বিশেষ প্রবণতা কার্যকরভাবে বিদ্যমান যার নাম দিলেন সোরা। অধিকাংশ রুগ্ন অবস্থার কারণ হিসেবে তিনি সোরাকেই দায়ী করলেন। এ বিষয়েটি তিনি তার ক্রনিক ডিজিজেস গ্রন্থে বিশদভাবে আলোচনা করা করেছেন, যা অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ। তার জীবদ্দশায় ১৮২৮ সালে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। মায়াজম তত্ত্ব আজ বৈজ্ঞানিকভাবেই সু-প্রতিষ্ঠিত। তবে অনেকেই মায়াজাম তথ্যকে জীবাণু তত্ত্বের সাথে গুলিয়ে ফেলতে চান, তা কোনভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়। হ্যানিম্যানের মায়াজাম তথ্য জীবনীশক্তির সাথে সম্পর্কিত, জীবনের সাথে সম্পর্কিত। যার, এক ভিন্ন দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এবিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার বিশ্লেষণ করলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞান বুঝতে আরো সহজ হবে বলে আমার মনে হয়। হ্যানিম্যান তার ক্রনিক ডিজিজেস গ্রন্থে এ বিষয়গুলো অত্যন্ত জোরালো ভাষায় বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তি পেশ করে, তা প্রমাণ করেছেন। তা আমাদের প্রত্যেক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের জন্য একান্ত অনুকরণীয়। তাছাড়া যারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে জড়িত নন, অন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে জড়িত, আমি মনে করি অর্গানন সহ এ গ্রন্থটি যদি তারা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন তাহলে চিকিৎসা জগতের আরো উন্নতি হতে পারে এবং রুগ্ন মানুষ তাদের দ্বারা আরও অধিক সেবা পেতে পারে।
শক্তিকরণ
হানেমান হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জীবনের প্রথম দিকে মাদার টিংচার বা মূল ঔষধই ব্যবহার করতে। গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ধারাবাহিকতায় তিনি ধীরে ধীরে ঔষদের ক্ষুদ্র মাত্রা এবং উচ্চশক্তির দিকে ধাবিত হলেন। তিনি আরেক সত্যের সন্ধান পেলেন। তিনি অনুধাবন করলেন, জীবনীশক্তি সূক্ষ্ম জীবনীশক্তির বিশৃঙ্খলাই রোগ। রোগী আরোগ্যের জন্য আমাদেরকেও তাই শক্তির সূক্ষ্ম এবং ক্ষুদ্র স্তরে, অবশ্যই পৌঁছতে হবে। এ বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যা আবিস্কার করলেন তাহলো নবতম শক্তি অর্থাৎ পরবর্তীতে যার নাম রাখা হয় ৫০ সহস্রতমিক পদ্ধতি। হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের পর থেকে প্রায় ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি রোগ আরোগ্যের জন্য, অনুগ্রহ জীবনীশক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন একটি শক্তিস্তর খু্ঁজচ্ছিলেন, যা রোগ আরোগ্য এর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। নবতম শক্তি আবিষ্কারের পর সফল হল তার সকল কষ্টের গবেষণা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শক্তিকরণ সম্পর্কে ক্রনিক ডিজিজেস
৫ম খন্ডের ভূমিকা থেকে একটি উদ্ধৃতি পেশ করেই এ প্রসংগে আলোচনা শেষ করছি,( “
হোমিওপ্যাথি অনুযায়ী শক্তিতে পরিণত করার বিধানগুলো এরূপ যে, এ সকল নিয়মে প্রত্যেক
বস্তুতে ঔষধের গুনাগুন যা ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে তা সক্রিয় হয় ও সূক্ষ্মভাবে আমাদের
প্রাণের উপর অর্থাৎ, বোধশক্তি সম্পন্ন ও উত্তেজনাপ্রবণ তন্তুর উপর কাজ করতে পারে”।
(Homoeopathic Dynamizations are processes
by which the medicinal properties, which are latent in natural substances while
in their crude state, become aroused, and then become enabled to act in an
almost spiritual manner on our life; i.e., on our sensible and irritable fibre.”)
অর্গানন পরিচিত
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা জীবনের পথ চলতে গিয়ে এক সময় মনে হল, অর্গানন অফ মেডিসিন ভালোভাবে
অনুধাবন এর জন্য হানিমানের জীবনের কিছু কিছু বিষয়, তার বিশেষ কিছু গবেষণা, তার ধ্যান ধারণা গুলো অবশ্যই ভালোভাবে মূল্যায়ন করা একান্ত প্রয়োজন। হানেমানের গবেষণা জীবনের সবগুলো অধ্যায় পর্যালোচনা না করে, অর্গাননকে শুধু একটি বিজ্ঞান পুস্তক, ইতিহাস গ্রন্থ, দর্শন গ্রন্থ বা চিকিৎসা গ্রন্থ হিসাবে অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে আমার মনে হয় অর্গানের উপর ন্যায় বিচার করা হবে না। অর্গানন গ্রন্থের মধ্যে আলোচিত সবগুলো বিষয়ই সন্নিবেশিত করা হয়েছে, তবে মূল বিষয়বস্তু কে পাশ কাটিয়ে হ্যানিম্যান তার অর্গানন এর মধ্যে কোন বিষয়ে আলোচনা করেনি। তার মৌলিক গ্রন্থ অর্গাননের মধ্যে সমাজ সভ্যতা ও মানুষের এক সার্বিক দিক লক্ষ্য করা যায়। জীবন ও জগৎ কে অনুধাবন করে তিনি যে মৌলিক বিষয়টিকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন তার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একমাত্র রুগ্ন মানুষ। তাই তিনি এক মহান মানবতাবাদী' চিকিৎসক।
আমার আলোচ্য বিষয় দ্বিতীয় অংশ অর্গানন পরিচিত। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অর্গাননের পরিচিতি তুলে ধরা অসম্ভব। এই বিষয়টি আমি প্রথম থেকে, পরবর্তীতে, আপনাদের সামনে পেশ করবো ইনশাল্লাহ। এখানে অর্গানন বিষয়ের সারসংক্ষেপ আপনাদের সামনে পেশ করা হলো।
অর্গাননের
সারসংক্ষেপ
1.Theory of Similerization 24-70
2.Treat the Patient.1
3.Totality of Symtom 6-8,18, 83-104
4.Proving 105-142, ft.165
5.Potentialization 25, 246, 269-270
6.Similar 26-29
7.Single 169-170, 273,
8.Smallest 272, 275-283
আলোচ্য
বিষয় থেকে জানা গেল
*হোমিওপ্যাথিই সর্বশেষ চিকিৎসা
বিজ্ঞান *বিজ্ঞানী হিসেবে হানেমানর ৫টি
অবদানঃ ১। সদৃশ বিধান ২। ঔষধের শক্তি ৩। জীবনীশক্তির ৪। মায়াজম ৫। শক্তিকরণ *অর্গাননের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও সারসংক্ষেপ।
=mgvß=
(†jLK cwiwPwZt Wvt
†K Gg AvjvDÏxb, †K›`ªxq mn-mfvcwZ, evsjv‡`k †nvwgIc¨vw_K cwil`| †P¤^vit kvKzi
g¨vbkb, 775, m`i †ivW, ewikvj| †gvevBj bst 01711-10 83 25, www.dkmalauddin@gmail.com )
No comments:
Post a Comment